Home শীর্ষ সংবাদ থমকে যাওয়া জীবন, মৃত্যুর আলিঙ্গনে-২৪

থমকে যাওয়া জীবন, মৃত্যুর আলিঙ্গনে-২৪

16
0

যেটা বলছিলাম, দুজন দুই ঘরে, দেখা–সাক্ষাৎ নেই, ফোনে কথোপকথন হয়। এরই মধ্যে কেমন করে আমি আক্রান্ত হলাম, বুঝতে পারছিলাম না। করোনা কি লখিন্দরের ঘরে ঢোকা সেই সাপের চেয়ে সূক্ষ্ম, যে লোহার দরজার ফাঁক দিয়ে আমার শরীরে ঢুকে গেল?

সন্ধ্যা থেকেই আমার জ্বর জ্বর লাগছে। শোবার ঘরের বিছানায়ই আঠার মতো লেগে থাকি। না থেকে উপায় নেই। কারণ, শরীর ভীষণ দুর্বল। মাথা ওঠাতে পারি না। মনে হয় কত দিন যেন রোগে ভুগছি। রোগে ভোগা রোগীর মতো অবস্থা। এই ঘরই মূল শোবার ঘর। মোটামুটি বড়। লম্বা দুটো জানালা আছে। শখ করে বেশ বড় একটা ছবি টাঙিয়েছি দেয়ালে। একপাশে আছে রোদেলার ছোটবেলার ছবি। দিনের অনেকটা সময় এসব ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি। ক্লান্ত শরীরে এখন তা–ও পারি না। তবু মাঝেমধ্যেই তাকাই। এ সময় মেয়েটাকে খুব মনে পড়ে। বিষণ্ন চোখে তাকিয়ে থাকি ওই প্রিয় মুখের দিকে। এমন সময় বিকট শব্দে ফোনটা বাজে। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে প্রশ্ন, ‘আপনার নাম ভিকারুন কলি?’

উত্তর শুনে একটু ইতস্তত, ‘ইয়ে, আপনি কোভিড পজিটিভ।’ একটু টেনে, একটু আমতা আমতা করেই বললেন তিনি। মনে হলো আমাকে তিনি ভয় পাওয়াতে চান না। ভয় আর পাই না, কারণ সব লক্ষণ দেখে আমি তো জানিই আমি কোভিড পজিটিভ। এজাজের মতো সব উপসর্গই আমার আছে। তারপরও অফিশিয়ালি জানতে পেরে বুকের মধ্যে কেমন ভয়ে শিরশির করে ওঠে।

মনে মনে বলি, ‘হ্যালো করোনা, সত্যি তুমি এলে তাহলে অফিশিয়ালি?’
নার্স তখন বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। ‘আপনি কারও সঙ্গে দেখা করেছেন উপসর্গের পর?’
না।
আপনার সংস্পর্শে কেউ আসেনি?
না, আমি বাসার বাইরে যাইনি।
আপনি কোথাও যাননি?
না।
বিরক্তি লাগছিল। মনে মনে গাজীপুরের ভাষায় বললাম, এক কথা কতবার ফেদাইবেন? মানে শুদ্ধ ভাষায় বলা যায় এ রকম, কতবার বলবেন?
আপনার বাসায় কে থাকে?
আমার স্বামী, সেই আমাকে করোনাভাইরাস দিয়েছে।