প্রয়াত হিরোহিতো জাপানের সম্রাট থাকাকালে একবার বলেছিলেন, “যতদিন জাপান থাকবে, বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবে না। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু।” সম্রাট হিরোহিতোর এই বক্তব্য ছিল একজন বাঙালির প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ। এই বাঙালি ব্যক্তিটির জন্ম বাংলাদেশের কুষ্টিয়াতে।
রাধা বিনোদ পাল ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষক ও আইনজীবী, যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ও রাজশাহীতে, যদিও তিনি দেশ বিভাগের পর ভারতের নাগরিক হয়েছিলেন। টোকিওর চিয়োদা অঞ্চলে ১৮৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ইয়াসুকুনি স্মৃতিসৌধ, যেটি প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের স্মৃতির সম্মানে, যারা জাপানের হয়ে অথবা জাপানের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে অথবা যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কোনো ধরণের সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন।
এখানে একটি মোটে স্মৃতিস্তম্ভ ব্যতিক্রমী, যার স্মরণে এটি তৈরি, তিনি এই ধরণের কোন যুদ্ধ বা সহিংসতায় নিহত হননি। রাধা বিনোদ পালই হলেন সেই ব্যক্তি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ভারতীয় নাগরিককে জাপানে জাতীয় বীরদের পর্যায়ের সম্মাননা দেয়া হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০০৭ সালে তিনদিনের জন্য ভারত সফরে এসে রাধা বিনোদ পালের ছেলে প্রশান্ত পালের সাথে দেখাও করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যেই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করা হয়, সেই টাইব্যুনালের এগারো জন বিচারকের একজন ছিলেন রাধা বিনোদ পাল। ঐ ট্রায়ালে এগারোজন বিচারকের মধ্যে শুধুমাত্র রাধা বিনোদ পালই জাপানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রায় দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে জাপানের পক্ষে মি. পালের রায়ের জন্যই ঐ ট্রায়ালের কয়েকজন বিচারক প্রভাবিত হয়ে তাদের রায় কিছুটা নমনীয় করেছিলেন।